মধ্যরাতের বৃষ্টিতে চার যুবক

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

রাজিব হাসান
  • ১২
  • ৭৩
গতকাল শেষ হলো অনার্স থিউরি পরীক্ষা। তাই সবাই ছাত্রাবাস ছেড়ে ছুটছে বাড়ির উদ্দেশ্যে। আজ যাচ্ছে নয়ন ও শাহিন। দুই বন্ধু। তাড়াহুড়ো করে বাসের টিকেট কেটে উঠে পড়তেই বাস ছেড়ে দিলো। প্রফুল্ল মনে দু’জনেই নিমগ্ন বাসের মধ্যে নিজেদের কথোপকথনে।
হঠাৎ পাশের সিটে বসা একটি মেয়ে এগিয়ে এসে অপ্রস্তুত ওদের দু’জনের পরিচয় জানতে চাইলো। তারপর শুরু হলো ত্রিমুখী আলাপচারিতা। বাকিটা পথ এভাবেই.........। নয়ন, শাহিনের গন্তব্যের পূর্বেই চলে এলো মিলা নামের মেয়েটির ষ্টেশন। বিদায় বেলা অচেনা শূন্যতায় ডুবে যাচ্ছিলো মিলা!
তারপর দীর্ঘদিন কেটে যায়.........
একদিন বিকেলে শাহিন, নয়নের ছাত্রাবাসে একটি চিঠি আসে। প্রেরক – মিলা; প্রাপক – শাহিন। অতঃপর এভাবেই শুরু হয় উভয়ের মধ্যে পত্রবিনিময়। দিন যায় দিন আসে......মাঝেমাঝে মোবাইল ফোনে কথোপকথন। মিলার তখনও একান্ত নিজের একটা মোবাইল ফোন ছিলনা। দু’জনের ইচ্ছের সীমানাও বাড়তে থাকে। আর তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দু’জন দু’জনকে দ্বিতীয়বার দেখে নিতে চায়! উভয়ের ইচ্ছায় অবশেষে নির্ধারিত মাহেন্দ্রক্ষণে মিলা উপস্থিত শাহিনের ছাত্রাবাসে। আনন্দে উত্তেজিত শাহিন মিলা’কে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সম্ভাষণের উত্তর দিতেও ভুলে গেছে! অথচ মিলা’র দৃষ্টি অসহিষ্ণু । তার চোখ যেন খুঁজছে অন্য কাউকে। মিলা’র জড়তা বুঝতে পেরে শাহিন প্রশ্ন করল “ এনিথিং রং ? ” তুমি কি কিছু খুঁজছ ? হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে মিলা চমকে উঠে বলল, “শাহিন কি এখানে নেই ?” এবার শাহিন কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে বলল “আমি’ই তো শাহিন! ” উদভ্রান্তের মত মিলা এক পলকে তাকিয়ে আছে শাহিনের দিকে। তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিলা’র মস্তিষ্কে সংরক্ষিত সেই প্রথম দিনের কণ্ঠস্বর, তারপরে ফোনে বহুবার এবং আজকের কণ্ঠস্বর একই কণ্ঠস্বর। তবুও মিলছেনা সবকিছু। মিলা’র চোখে ঝাপসা লাগছে । শাহিনও খানিকটা বিব্রতবোধ করছে। ঘটনাটা বুঝতে পারছেনা। কি হয়েছে মিলা’র! এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন! খানিকবাদে মিলা বুঝতে পেরেছে কি মহাভুল সে করেছে এতদিন! নয়ন ভেবে সেই প্রথম থেকেই শাহিনকে চিঠি লিখে এসেছে মিলা। উফ! কি ভুল! মহাভুল!!
ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে শাহিনকে সব খুলে বলল। সেই দিন বাসে দু’জনের সাথে পরিচয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মিলা দুজনের নাম গুলিয়ে ফেলেছে। মিলা আসলে শাহিনকে নয়, চিঠি লিখেছে নয়নকে। নয়নের সাথে দেখা করতেই আজ এখানে আসা। হতভম্ব হয়ে শাহিন সব কথা শুনে মিলা’কে আশ্বস্ত করল। মিলা’র; “নয়ন কোথায়?” এই প্রশ্ন করতেই শাহিনের মাথায় একটি কুটিল বুদ্ধি এলো। নয়ন আসতে আরও কিছুদিন বাকি এটা শাহিন জানে। তবু মিলা’কে ‘এক্ষুনি এসে পড়বে’ এই কথা বলে বলে বিকেল অবধি গড়ালো। মিলা ও যাবে যাবে করে নয়ন’কে এক পলক দেখার ইচ্ছে দমন করতে পারলনা। আর তাই তাকে বাড়ি যাবার সর্বশেষ বাসটি ও মিস করতে হলো। নিরুপায় মিলা’কে বাসায় মিথ্যে বলে রাতে থাকতে হল শাহিনের ঠিক করে দেয়া পরিচিত আবাসিক হোটেলে। এর মধ্যে নয়ন চলে এলে শাহিন তাকে নিয়ে ফিরে আসবে মিলা’র কাছে খুব দ্রুত।
রাত বাড়ছে ......... সাথে বাড়ছে মিলা’র দুশ্চিন্তা। কারো কোনো খবর নেই। নয়নের মোবাইল ফোনে শাহিন বহুবার কল করেছে। কিন্তু ফোন নাকি বন্ধ! ইশ! নিজের যদি একটা মোবাইল ফোন থাকতো! অজানা শঙ্কা তবুও আশা; যদি দেখা হয় নয়নের সাথে! এমন কথা ভাবতে ভাবতেই ক্লান্ত মিলা ঘুমিয়ে যায়। হঠাৎ ঘুম ভাঙে প্রচণ্ড বজ্রপাতের শব্দে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। এতো রাত হলো অথচ নয়ন কিংবা শাহিনের দেখা নেই। অজান্তেই শিউরে উঠলো মিলা’র শরীর!
খানিকবাদে মিলা’র রুমের দরজায় মৃদু শব্দ হচ্ছে। উদভ্রান্তের মত ছুটে গিয়ে দরজা খুলে আশাহত মিলা লক্ষ্য করলো শাহিনের সাথে নয়ন নয় বরং এসেছে অপরিচিত তিন যুবক। যাদের লোলুপ দৃষ্টি মিলার শরীর ভেদ করে চলে যাচ্ছে এপার থেকে ওপার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শাহিন সহ অসহিষ্ণু তিন যুবক রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো ভিতর থেকে। সারা শহর ভেসে যাচ্ছে তখন প্রবল বর্ষণে । আকাশে মেঘের তীব্র চিৎকার.........
মিলা’র হৃদয়ে গোপন ভয়টি অবশেষে হানা দেয় ওর রুমে ঠিকই। প্রথমে শাহিন, পর্যায়ক্রমে একে একে চারজন মিলা’র ক্লান্ত দেহে প্রবেশ করে জোরপূর্বক। মিলা’র অনুনয়, চিৎকার, আর্তনাদ সব......সবকিছুই মিলিয়ে যায় মধ্যরাতের প্রবল বৃষ্টিতে...............

অবশেষে ওরা চলে আসে রাস্তায়...... মধ্যরাতের বৃষ্টিতে ভিজে চলে চার যুবক অবিরাম...............
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dipa Efat Jahan অদ্ভুত সুন্দর করে লিখতে পারেন আপনি। মানুষের মনকে লেখা শেষ না অব্দি বের হতে দেননা। একটা বিষয় আমি বুঝলাম না সেটা হলো এমন একটা মৌলিক গল্পে বিচারকের নম্বর বন্টন দেখে আমি রীতিমত অবাক এবং হতাশ। যদিও পাঠকের স্কোরটা আশানুরূপ হয়েছে।
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু বেদনাদায়ক গল্প, সমাজের ঐ সমস্ত নরপশুদের প্রতি আমার প্রচনড ঘৃনা ও আক্রোশ যারা নারীর দুর্বলতার সুজোগ নেয়। গল্পে শিক্ষনিয় একটি বিষয় উঠে এসেছে, অসংখ্য ধন্যবাদ লেখক কে, সচেতনতামূলক গল্পটির জন্য। শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মন্তব্য পড়লেই মন ভালো হয়ে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে...........................
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
আল জাবিরী অসাধারণ...................................
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ধন্যবাদ @ আল জাবিরী
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু দুঃখজনক চিত্র। চমৎকার লিখেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ উদ্দিন ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ছন্দদীপ বেরা Valo laglo
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ছন্দদীপ বেরা Thanx
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
তাপসকিরণ রায় ঘটনার নতুনত্ব আছে। ভাল লেগেছে বেশ। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
তাপসকিরণ রায় @ দাদা কেও ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
দীপঙ্কর বেরা বেশ । ভাল লাগল ।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ধন্যবাদ দাদা...মন্তব্ব্যের জন্য @ দীপঙ্কর বেরা
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
রোদের ছায়া গতানুগতিক ভাবে শেষ হল না বলে মনের ঘরে আঘাত করলো গল্পটি। কিন্তু বাস্তবতার ছোঁয়া থাকায় সার্থক গল্প। বাস্তব যে এমনি নিষ্ঠুর ।
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
রোদের ছায়া @ অসংখ্য ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ঐশিকা বসু গল্পটি আমার ভালো লেগেছে, নিখাদ ভালবাসার গল্প ভেবে শুরু করে শেষের মোড়টায় খুব ভাল লাগল। লিখে যান। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
শেষের মোড় পর্যন্ত যাবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
জাকিয়া জেসমিন যূথী শেষ পর্যন্ত গল্পের মোড় এভাবে ঘুরে যাবে ভাবতেই পারিনি। খুউব কষ্ট পেলাম আর তীব্র ঘৃণা শাহিনের মতো ছেলেদের। ...গল্প ভালো লিখেছেন। লেখক হিসেবে আপনি সার্থক।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
দোয়া করবেন যেন শেষ অবধি যেতে পারি...............
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

১০ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪